জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১০ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত থেকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে নিচ্ছিল পুলিশ। দুপুরে খাবারের বিরতিতে একটি রেস্তোরাঁয় নেমেছিলেন তাঁরা। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ সদস্যরা উৎকোচ নিয়ে ওই রেস্তোরাঁর একটি কেবিনে অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে মতিউর রহমানের গোপন বৈঠকের সুযোগ করে দেন। গত ১২ আগস্ট দুপুরে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সৈয়দনগরে নিরালা হাড্ডি নামের এক রেস্তোরাঁয় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক উপপরিদর্শকসহ ১১ পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক আদেশে ১১ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়টি জানানো হয়।
সূত্র জানায়, ছাগলকাণ্ডে আলোচিত এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক মাস আগে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। গত কোরবানির ঈদের সময় ‘ছাগলকা-ে’ আলোচনায় আসেন একাদশ বিসিএসের (শুল্ক ও আবগারি) কর্মকর্তা মতিউর রহমান।
এরপর তাকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে যুক্ত করা হয়। সরিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় সোনালী ব্যাংকে সরকার মনোনীত পরিচালক পদ থেকেও। সংবাদমাধ্যমে একের পর এক মতিউর, তার স্ত্রী ও সন্তানের সম্পদের খবর আসার মধ্যে দুদক তার সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে। গত ১৫ ডিসেম্বর মতিউর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ১২০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাছাড়া চলতি বছরের শুরুতে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী ও তাদের ছেলে-মেয়ের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে দুদক।
মামলায় মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্নবের বিরুদ্ধে ১২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনে সংস্থাটি।
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার রিতেশ চাকমা বলেন, সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে গত ১১ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ কারাগারে আনা হয়। এর মধ্যে তাঁকে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ ঢাকা আদালতে তিনবার হাজির করা হয়। সর্বশেষ তাঁকে গত ১২ আগস্ট হাজির করতে কিশোরগঞ্জ কারাগার থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছিল এবং একই দিন তাঁকে আবার কিশোরগঞ্জ কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে ২৬ আগস্ট মতিউর রহমানকে কিশোরগঞ্জ থেকে কাশিমপুর-২ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।