আজ শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রায় ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহু প্রতিক্ষিত জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনের কাউন্সিলর তালিকায় রাখা হয়নি দলের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বহুবার কারাভোগ করা অভিজ্ঞ নেতাদের।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, তৃণমূলের ভোটারদের নিয়ে গঠিত এ কাউন্সিলর তালিকা প্রণয়নের সময় নতুন মুখদের প্রাধান্য দেওয়া হলেও দলীয় ইতিহাস ও সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অনেক নেতার নাম বাদ পরাতে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কর্মীদের মধ্যে।
জেলার ১৩ উপজেলার বিভিন্ন শাখা থেকে কাউন্সিলর করা হয়েছে ২ হাজার ৯০ জনকে। তবে বাদ পড়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মাসুদ হিলালী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানী, জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এডভোকেট ফজলুর রহমান শিকদারসহ আওয়ামী লীগ আমলে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার বহু নেতা-কর্মী।
কাউন্সিলর না হওয়ায় সাবেক সভাপতি-সম্পাদকসহ জেলখাটা নেতাদের ক্ষোভ সম্মেলনের পরিবেশে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত তৃণমূলের মধ্যে বিভক্তি বাড়াবে এবং নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করবে। অন্যদিকে, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতারা বলছেন, কাউন্সিলর তালিকা গঠনতন্ত্র ও দলের নীতির আলোকে প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছেন, কিছু অভিজ্ঞ নেতার নাম বাদ পড়ায় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।
সাবেক জেলা সদস্য ও রশিদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন শিহাব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়েছি। পাঁচবার জেল খেটেছি, দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট পর্যন্ত পাইনি। আওয়ামী লীগের পতনে সব দুঃখ ভুলেছিলাম। কিন্তু নিজের দলের সম্মেলনে কাউন্সিলর না হওয়াটা সবচেয়ে বড় দুঃখ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক চোখ হারানো বিএনপি কর্মী জাহিদুল ইসলাম নিরব বলেন, আন্দোলনে লাঠি-গুলি খাই আমরা; কিন্তু কাউন্সিলর হয় সুবিধাভোগীরা।
নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার বিকাল চারটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পুরাতন স্টেডিয়ামে কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোট গণনার পর প্রকাশ করা হবে ফলাফল। জেলা বিএনপি’র ২১টি ইউনিটের ২ হাজার ১শ’ ৭ জন কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবেন। সভাপতি পদে দুইজন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সভাপতি পদের দুইজন প্রার্থী হলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র বর্তমান সভাপতি মো. শরীফুল আলম এবং জেলা বিএনপি’র বর্তমান সহ-সভাপতি রুহুল হোসাইন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদের চারজন প্রার্থী হলেন, জেলা বিএনপি’র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জেলা বিএনপি’র বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, নিকলী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শফিকুল আলম রাজন এবং নিকলী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট এ এম ছাজ্জাদুল হক।
তবে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী জেলা বিএনপি’র সদস্য এডভোকেট মো. ওমর ফারুক তার মনোনয়নপত্রটি বৈধ হয়েছে নাকি অবৈধ হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়নি অভিযোগ করে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করে এডভোকেট মো. ওমর ফারুক অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন সব প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে প্রতীক বরাদ্দ দিলেও আমার বিষয়ে কোনো কিছু জানাননি। দুইদিন অপেক্ষার পর সশরীরে আমি নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেছি, মনোনয়নপত্রের বিষয়ে জানতে চেয়েছি কিন্তু আমার মনোনয়নপত্র যদি বাতিল হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি আমাকে অফিসিয়ালি জানানোর কথা থাকলেও জানানো হয়নি। আমি বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।
এসব বিষয়ে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, কেন্দ্রীয় অন্তত ১০ জন নেতা রয়েছেন যারা দলের জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের অনুমোদনের মাধ্যমে তারা এই দায়িত্ব পালন করছেন। ঠিক তেমনি নেতাকর্মীদের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানাতে আমি সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছি। এ ব্যাপারে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব ও দলের নেতাকর্মীরা যে সিদ্ধান্ত নিবেন, সেটিই আমার সিদ্ধান্ত হবে।
জেলা বিএনপির সভাপতিমো. শরীফুল আলম আরো বলেন, থানা কমিটিগুলো নির্ধারিতদেরকেই কাউন্সিলর করেছে। উপদেষ্টাদের ভোট নেই। আর যাদের দীর্ঘদিন গ্যাপ আছে, মাঠে না থাকায় তাদের কাউন্সিলর করা হয়নি।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সম্মেলনের ফলাফলে উপেক্ষিত নেতাদের ক্ষোভ কীভাবে প্রতিফলিত হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
দলীয় সূত্র জানায়, শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ সম্মেলনকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হবেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্স, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ্ ওয়ারেছ আলী মামুন ও আবু ওয়াহাব আকন্দ। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। সম্মেলনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।