শনিবার , ১৫ জুলাই ২০২৩ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইতিহাস ঐতিয্য ও ভ্রমন
  6. ঐতিহাসিক
  7. কৃষি
  8. ক্রিকেট
  9. খেলাধুলা
  10. জাতীয়
  11. তথ্য ও প্রযুক্তি
  12. ধর্ম
  13. প্রবাস
  14. ফটো গ্যালারি
  15. ফুটবল

মহাবীর ঈশা খাঁর প্রেম কাহিনী ও ঐতিহাসিক এগার সিন্দুর

প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ১৫, ২০২৩ ৫:৪৪ অপরাহ্ণ

ইতিহাস, ঐতিয্য ও ভ্রমন বিষয়ক লেখক

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এগারসিন্দুর। জনশ্রুতি রয়েছে, ১১টি নদীর মোহনায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে উঁচু শক্ত এঁটেল লাল মাটির এলাকা ব্যবসা বাণিজ্য ও বসবাসের স্থান হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় গঞ্জের হাট নামে এটি প্রসিদ্ধ ছিল। ১১টি নদীর সংগমস্থলে হওয়ায় স্থানীয়রা ১১টি নদীকে সিন্দু আখ্যায়িত করে গঞ্জের হাট থেকে স্থানটির নামকরণ করেন এগারসিন্দুর।

এ দুর্গের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঈশাখাঁ ও মোগল সেনাপতি রাজা মানসিংহের সম্মুখ যুদ্ধ। মানসিংহকে পরাজিত করেও তাকে হত্যা না করে বিরল উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন মহাবীর ঈশাখাঁ। তাঁর সৌজন্যতা ও অথিতিয়তায় মুগ্ধ হয়ে মানসিংহ ঈশাখাঁর সঙ্গে ঐতিহাসিক সন্ধি করেছিলেন।

ষোড়শ শতাব্দীতে বেবুদ নামে এক উপজাতি প্রধান এগারসিন্দুর দুর্গ নির্মাণ করেন। ঈশা খাঁ বেবুদ রাজার কাছ থেকে দুর্গটি দখল করেন এবং একে প্রচন্ড শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেন। এটি ছিল ঈশা খাঁর অন্যতম শক্তিশালী ঘাঁটি।

১৮৯২ সালের ভূমিকে¤প দুর্গটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয় । বর্তমানে কিছু নিদর্শন রয়েছে যা দেখে অনুমান করা যায় দুর্গটির অবস্থান। দুর্গটি ছিল বিশাল আকৃতির। দুর্গ এলাকায় এখনো খুঁজে পাওয়া যায় জাফরি ইট, অজানা সুরঙ্গ, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ। এটি ছিল ঈশাখাঁর অত্যন্ত শক্তিশালী ঘাঁটি। মোগলরা বারবার আক্রমণ করেও এ দুর্গের পতন ঘটাতে ব্যর্থ হয়।

এছাড়া এগারসিন্দুর দুর্গে বহুল আলোচিত ঈশা খাঁর বিবাহ। মহাধুমধামে অনুষ্ঠিত হয়। সৈয়দ ইব্রাহীম মালেকুল উলামার কন্যা ও ঈশা খাঁর খালাতো বোন সৈয়দা ফাতেমা বানুকে ঈশা খাঁ প্রথমে বিবাহ করেন।

ঈশা খাঁর আলোচিত প্রেমের কাহিনীটি হচ্ছে, মোগল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামের ব্যাপারে জমিদার চাঁদ রায়ের বাড়িতে শলাপরামর্শের জন্য ঈশা খাঁর যাতায়াত ছিল। রাজকার্যে পারদর্শী জমিদার চাঁদ রায়ের কণ্যা স্বর্ণময়ী ওই পরামর্শ সভায় নিয়মিত অংশ নিতেন। এভাবেই দুজনের পরিচয় পরবতীর্তে প্রেমে রুপান্তরিত হয়।

মহাবীর ঈশা খা, স্বর্ণময়ীর পিতা চাঁদ রায়ের কাছে বিয়ের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। বিয়ের প্রস্তাব উভয় পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ ও ব্যাপক দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ থেকেই শেষ পযার্য়ে যুদ্ধ বেধে যায়। প্রেমের টানে স্বর্ণময়ী ও ঈশা খাঁ শ্রীমন্ত খাঁ নামে এক বিশ্বস্থ রাজ কর্মচারীকে নিয়ে গোপন পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রীমন্ত খাঁর সাথে কোটিশ্বরের মন্দিরে পূজা দেওয়ার ছল করে স্বর্ণময়ী নৌকাযোগে প্রথমে সোনারগাঁও এবং পরে এগারসিন্দুরে এসে পৌঁছান। এদিকে যুদ্ধে চাঁদ রায় ও কেদার রায় পরাজিত হন। যুদ্ধের পর এগারসিন্দুর দুর্গে মহাধুমধামে তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর স্বর্ণময়ীর নাম রাখা হয় অলী নিয়ামৎ খানম।

দুর্গের পাশেই রয়েছে বিশালায়তনের বেবুদ রাজার দীঘি এবং প্রাচীন দুটি মসজিদ। বেবুদ রাজা প্রজাদের জলকষ্ট দূর করতে ৫০ একর জমির ওপর একটি স্বচ্ছ পানির দীঘি নিমার্ন করেছিলেন।

প্রাচীন মসজিদ দুটির মধ্যে শাহ মাহমুদের মসজিদ, ভিটা ও বালাখানা পুরাকীর্তির অনন্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। একটি পুকুরও আছে মসজিদের সামনে। ১৬০০ সালের দিকে এটি নির্মিত হয়েছিল। এর প্রধান বিশেষত্ব হলো প্রবেশদ্বারটি ঠিক দোচালা ঘরের আদলে তৈরি করা। এটিই বালাখানা নামে পরিচিত। বালাখানার জন্য মসজিদটির সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়েছে।

বর্গাকৃতির এ মসজিদটির প্রত্যেক বাহু ৩২ ফুট দীর্ঘ। ৪ কোণায় ৮টি কোণাকার বুরুজ রয়েছে। বুরুজগুলো কয়েকটি স্তরে বিভক্ত এবং প্রতিটি বুরুজের শীর্ষে ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদে বিরাট আকৃতির একটি গম্বুজ রয়েছে এবং গম্বুজটির শীর্ষে কলসাকৃতির চূড়া রয়েছে। ভেতরে পশ্চিমের দেয়ালে ৩টি মেহরাব রয়েছে।

সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে ১৬৫২ সালে অপূর্ব সুন্দর এই সাদী মসজিদটি নির্মিত হয়। পোড়ামাটির কারুকার্য সমৃদ্ধ ইটের তৈরি ছোট এই মসজিদটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় যা এক কথায় দৃষ্টিনন্দন। এ ধরনের টেরাকোটা মসজিদ ইতিহাসে বিরল। বর্গাকৃতির এই মসজিদটির প্রতিটি বাহু ২৭ ফুট দীর্ঘ। মসজিদটি ১ গম্বুজ বিশিষ্ট। ৪ কোণায় ৪টি বুরুজ রয়েছে এবং প্রতিটি বুরুজের শীর্ষে গম্বুজ রয়েছে।

মসজিদের পূর্বদিকের দেয়ালে ছোট—বড় ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ১টি করে প্রবেশদ্বার রয়েছে। ভেতরে ৩টি মেহরাবই অপূর্ব সুন্দর। মূল মেহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং পোড়ামাটির চিত্র ফলকের সাহায্যে সুনিপুণভাবে অলংকৃত। মসজিদের প্রধান প্রবেশদ্বারের মাথায় আরবী ও ফার্সি ভাষায় লিখিত ১টি শিলালিপি রয়েছে।

এগার সিন্দুর গ্রামে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম শাহ গরীবউল্লাহর মাজার, অধিকারী মঠ, মঠখলা কালী মন্দির, দেওল মন্দির, নীলকরের কুঠি উল্লেখ করার মতো।

ভ্রমন পিপাসু দর্শনার্থীরা ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জে জেলা শহরে এসে পঞ্চাশ টাকা ভাড়ায় সিএনজি/অটো রিকশাযোগে পাকুন্দিয়ায় যেতে হবে। পাকুন্দিয়া উপজেলা হতে অটোরিকসা/মিশুকে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা খরচ করে ঈশাখাঁ আমলের নির্মিত প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এগার সিন্দুরদেখতে যেতে পারেন।

আতা মোহাম্মাদ উবায়েদ
ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভ্রমন বিষয়ক লেখক
obayed.roni@gmail.com

সর্বশেষ - ইতিহাস ঐতিয্য ও ভ্রমন

আপনার জন্য নির্বাচিত

রঙ্গিন ছাতার শহর অ্যাগুয়েডা, জাদুকরী অনুভূতি

কুমিল্লার হোমনা থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন জয়নাল আবেদীন

কিশোরগঞ্জ জেলা বারে মতবিনিময় করলেন সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

কৃতিত্বপূর্ণ কর্মের স্বীকৃতিতে বিশেষ পুরস্কার পেল জয়নাল আবেদীন

কিশোরগঞ্জে মার্শাল আর্ট প্রতিভা অন্বেষণ প্রশিক্ষণের সমাপনী

সুপার ফুড সজনে পাতার উপকারিতা

দেশে খাদ্য মজুদ আছে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিকটন, খাদ্যর অভাব হবেনা– খাদ্যমন্ত্রী

বিলুপ্তির পথে টাঙ্গাইলের মধুপুর আমবাড়িয়া জমিদারবাড়ি

রসুনের উপকার ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে হুসাইন মুহাম্মাদ এরশাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত